ওপার বাংলার বরিষ্ঠ কথাকার সেলিনা হোসেন, সাহিত্য চর্চা করে চলেছেন দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে, দীর্ঘকাল ধরে তাঁর জনপ্রিয়তাও অব্যাহত। সমাজ-রাজনীতি এবং অর্থনীতির বহুমাত্রিক সমস্যা-সম্ভবনা ঠাঁই পেয়েছে তাঁর কথাভুবনে। একইভাবে সেলিনা হোসেনের কথানদীর বাঁকে বাঁকে নারীভাবনাতেও যুক্ত হয়েছে নিত্য নতুন ভাবনা; ব্যক্তিত্বে ও বৈভবে নারীর বহুমাত্রিকতা ধরা পড়েছে সেখানে। আর আধুনিক মানবতাবাদের বিশিষ্ট একটি পর্যায় যে মানবী-ভাবনা, সে সম্পর্কে গভীর সচেতন তিনি। বহতা সমাজের পট-পরিবর্তন ও নারীভাবনার বিবর্তন সম্পর্কে সচেতন থেকেই কথাবিশ্বে মেয়েদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সমাজের বিবিধ শ্রেণির নারী বাস্তবতার সঙ্গে সেলিনা হোসেনের গল্পবিশ্বে জায়গা করে নিয়েছে, আবার প্রকাশ করেছে নিজেদের অনন্যতাও। তেমন বিশ শতকের একেবারে প্রান্তে এসে তিনি গল্পে এনেছেন একক মাতৃত্বের মত বিষয়কে, যা আজও সমাজের প্রতিটি স্তরে নির্দ্বিধায় গৃহীত হয়নি। অথচ তিনি একেবারে গ্রামজীবনের প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে উপস্থাপিত করেছেন গল্পে; এখানে আলোচনা করা হয়েছে লেখিকার দুটি গল্প ‘মতিজানের মেয়েরা’ এবং ‘পারুলের মা হওয়া’। আসলে দুই গ্রামীণ রমণীর এই বিপ্লবাত্মক সিদ্ধান্তের পিছনে আছে বধূ নির্যাতন ও উপেক্ষিত নারীর করুণ ইতিহাস; পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী আবহমান কাল ধরে যে যাপন-যন্ত্রণা ভোগ করে এসেছে, আলোচ্য গল্পগুলি তার বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদই জানায় না, উত্তরণের পথও দেখায়।