স্নায়ুযুদ্ধের জটিল পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের সৃষ্টি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বৃহৎ দেশগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন বিরোধিতার নীতি গ্রহণ করলেও স্বাধীনতার পর কয়েক মাসের মধেই স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভের পর প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সম্পর্ক সাহায্য নির্ভর হলেও ধীরে ধীরে তা কার্যকর অংশীদারি সম্পর্কে রূপান্তরিত হয়।বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের শুরুর দিকে নানাবিধ কারণে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্খ হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বিদ্বেষ নয়’ নীতি গ্রহণ করে সব ধরনের বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে সমন্বয় করে বাস্তববাদী অর্থনৈতিক নীতি পরিচালনা করেন। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় তাঁর বৃহৎ স্বার্থ তথা সোভিয়েত প্রভাব ঠেকাতে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, রাস্তা ও সেতু সংস্কার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিপুল পরিমাণে সাহায্য প্রদান করার মাধ্যমে বাংলাদেশে আর্থিক সাহায্য প্রদানকারী দেশ ̧লোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ স্থানে অবতীর্ণ হয়। তাঁর শাসনামলে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে কিছু টানাপোড়েন প্রত্যক্ষ করা গেছে, যার নেপথ্যে বৈশ্বিক রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ প্রত্যক্ষ করা যায়। বঙ্গবন্ধু পরবর্তী ১৯৭৫-১৯৮১ সালের সরকার গুলোর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। ফলে, দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্কের দরুণ বাংলাদেশে পশ্চিমা সাহায্য বৃদ্ধি পায়। এর নেপথ্যে ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে। সে সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে বাণিজ্যিক ভারসাম্যের ঘাটতি হ্রাস পায়। প্রবন্ধে ১৯৭১ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রথম দশকের নানাবিধ কার্যক্রম, প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।