ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী ভগবানিয়া সম্প্রদায়ের সমন্বিত ধর্ম কর্তাভজা। এ সম্প্রদায়ের সদস্যরা একই সঙ্গে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি সমন্বিতভাবে লালন করে থাকে। তাদের মধ্যে কোনো জাতি-বর্ণ-গোষ্ঠীভেদ দেখা যায় না। একাগ্রতা ও ভক্তি সহকারে ঈশ্বরজ্ঞানে ̧গুরু সেবাই এ সম্পধদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্য। ̧গুরুধর্মী এ মতবাদের অনুসারীরা যাপিত জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রে নানা নিয়ম-কানুন মেলে চলে, যার বেশিরভাগই সাস্থ্য সম্পর্কিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগেও এ সম্প্রদায়ের সদস্যরা ধর্মীয় এবং সনাতন ধ্যানধারণার প্রতি তাদের বিশ্বাস অটুট রেখেছে। তাদের শাস্ত্রমতে, ব্যক্তির কর্মফলই রোগব্যাধির কারণ। ধর্মীয় অনুশাসন থেকে বিচ্যুতি ঘটলেই ব্যক্তি নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। ধর্মীয় ̧গুরুগণ তাদের লোকায়ত চিকিৎসার চর্চা করে থাকেন। তারা সাধারণত নিরামিষভোজী। তারা বারো মাসে বারো ধরনের আচার-অনুষ্ঠানাদি পালন করে থাকে। ভগবানিয়া সম্প্রদায় মূলত গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক হলেও বর্তমানে তারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নানা পেশা ও কর্মের সঙ্গে জড়িত। তারপরেও তাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধি নিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। বক্ষ্যমান প্রবন্ধটি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার চরগ্রামের নির্বাচিত ৬০ জন উত্তরদাতার কাছে থেকে মুখ্য তথ্য ও বিভিন্ন গৌণ উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে রচিত। প্রবন্ধে ভগবানিয়া সম্পধদায়ের যাপিত জীবনে ধর্মচর্চার স্বরুপ অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।