সং ̄স্কৃ সাহিত্যের ইতিহাসে এক উজ্জ্বতম নক্ষত্র হলেন মহাকবি কালিদাস। বাণীর বরপুত্র কালিদাস মূলত কবি হলেও নাট্যরচনাতেও তাঁর কৃতিত্ব অবিসংবাদিত। তাঁর রচিত ‘অভিজ্ঞান-শকুন্তলম্’ নাটক সংস্কৃত সাহিত্যে তথা বিশ্বসাহিত্যের দরবারে শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে পরিগণিত। নাট্যকলার বৈচিত্রে, কাব্য শিল্পের মাধুর্যে, প্রেমের পবিত্রতায় কালিদাস তাঁর এই নাটকটিকে সমগ্রতায় পূর্ণ করে তুলেছেন। মহাভারতে বর্ণিত হস্তিনাপুররাজ দুষ্যন্ত ও আশ্রম বালিকা স্বর্গের অপ্সরা মেনকা এবং ঋষি বিশ্বামিত্র কন্য শকুন্তলার প্রণয় ও পরিণয় কাহিনীই এই নাটকের উপজীব্য। কালিদাসের নাট্যপ্রতিভা দুষ্যন্ত-শকুন্তলার গোপন প্রেম, গোপন বিবাহ (গান্ধর্ব মতে), দুর্বাসার অভিশাপের কারণে দুষ্যন্তের আত্ম-বিস্মৃতি, শকুন্তলার প্রত্যাখান দৃশ্য এক অভিনব দক্ষতার পরিচয় বহন করে। প্রতিটি ক্ষেত্রে গোপনীয়তাকে আশ্রয় করে কবি সুকৌশলে ঘটনাপ্রবাহকে তাত্ত্বিক রূপদান করে নাটকের উৎকর্ষ সাধন করেছেন। দুর্বাসার অভিশাপ কালিদাসের অমর প্রতিভার অনবদ্য সৃষ্টি। অভিশাপের বিষয়টি যদি না থাকত তাহলে নাটকটি আরেকটি গতানুগতিক মিলনান্তক প্রেমকাহিনী হয়ে উঠত। কালিদাস দুর্বাসার অভিশাপ ও গোপনীয়তার বিষয়কে নাট্যকৌশল হিসেবে অবলম্বন করে অনুতাপ ও তপস্যার মধ্য দিয়ে আত্মপরিশুদ্ধির আদর্শ স্খাপন করেছেন। নাট্যকাহিনীকে সার্থকমন্ডিত করতে নাট্যকারের নাট্যকৌশল অবলম্বনের সার্থক প্রয়াস সম্বন্ধে এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে ।